কথিত কুরআন খতম মুসলিম সম্প্রদায়ের সব সক্ষমতাকে খতম করে দিচ্ছে। সাপুড়ের সাপের মন্তরের মতো মুখস্থ করতে গিয়ে তারা দুটি পাপ করছে। প্রথমত, কুরআন তিলাওয়াত করার কথা ধীরেসুস্থে সেটা তারা মানছে না। দ্বিতীয়ত, কুরআন মুত্তাকীদের জন্য পথ প্রদর্শক এটা বোঝার সুযোগও তাদের হচ্ছে না। সুরা মুজাম্মিল যেখানে বলছে তোমরা কু্রআন তিলাওয়াত করো ধীরে ধীরে, স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে। সেখানে হাফেজি করার নামে পবিত্র কুরআন খুলে পাওয়ার টিলার কিংবা ট্র্যাক্টর স্ট্যার্ট দেয়া হচ্ছে সেটা সত্যিই দু:খজনক। একইভাবে এই মুখস্থ করার বাইরে তারা এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কিছুই বোঝে না কিংবা বোঝার চেষ্টা্ করে না যা আরও বড় সমস্যা।
কেউ মারা গেলে বিশেষ করে কুলখানি ও চল্লিশা সামনে রেখে মাদ্রাসায় গিয়ে হুজুরদের খাওয়ানোর পর তাদের কাছে দোয়া চাওয়া হয়। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যায় কারও শেষকৃত্যে তাকে দাহ করা কিংবা মাটি চাপা দেয়ার পর ব্রাহ্মণদের উপযুক্ত দক্ষিণা দিয়ে তাদের কাছে আশির্বাদ প্রার্থনা করা হতো। এটা কি তবে তার ধারাবাহিকতা? অন্যদিকে কেউ কেউ নির্দিষ্ট অঙ্কের নামমাত্র টাকা দিয়ে এতিম মিসকিন পোলাপাইনকে দিয়ে কামলা খাটায় কুরআন খতবের জন্য। তারপর ৫-১০ কেজি জিলাপী কিনে অদ্ভুত স্টাইলে চাওয়া হয় দোয়া।
পবিত্র কুরআন এই রমজান মাসে নাজিল হয়েছিল সত্য মিথ্যার প্রভেদকারী এবং পথ প্রদর্শক হিসেবে। এটা তো সেই হিসেবে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য প্রেসক্রিপশন। একবার ভেবে দেখেন কোনো ডাক্তারের দেয়া প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ খাওয়ার বদলে আপনি যদি সেটা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ছড়া পাঠ, কবিতা আবৃতি কিংবা পালাগানের মতো গাইতে থাকেন কোনো কাজ হবে? হয়তো এজন্যই কুরআন ও সুন্নাহর প্রকৃত আমল থেকে আস্তে আস্তে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে। আর সে কারণে আজ মুসলিম বলতে পাঁচ ধরণের মানুুষকে বোঝায়।
ক. শরনার্থী যারা মানুষের করুণা প্রত্যাশী
খ. সন্ত্রাসবাদী যারা বিশ্ব ধ্বংস করতে চায়।
গ. খগেন টাইপ পলিটিক্যাল মুসলিম যারা এরদোয়ানকে সর্বেসর্বা ভাবে।
ঘ. উন্মাদ যারা ভুল ব্যাখ্যায় ইসলামকে হাসির পাত্র বানায়।
ঙ. ইসলামোফোবিক খচ্চড় যারা আসলে ধান্দাবাজ।
করোনা সংক্রমণে যদি আমি দুনিয়া থেকে চলে যাই মৃত্যুর আগে সবাইকে বলে যেতে চাই আমার মৃত্যুর পর যেনো যাই হোক কুরআন খতম নামক অযৌক্তিক আয়োজন না করা হয়। আমি চাই কেউ যদি সত্যিই আমাকে স্মরণ করে তারা যেন অর্থসহ আলোচনা সহযোগে তিলাওয়াত ও তাফসীর আয়োজন করে; সেটা ৮-১০ জন মানুষের মধ্যে হলেও হবে। আমি আরও বেশি খুশি হবো এই তাফসীর অনুষ্ঠানে যদি ইতিহাস-ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়। পাশাপাশি ইসলাম লেখাপড়াকে যে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সেদিকে আলোকপাত করা হয়।
প্রসঙ্গত, আমি এটাও বিশ্বাস করি মায়া, মহব্বত থেকে কেউ যদি কুরআন হিফজ করে সেটা অনেক বড় গৌরব ও শান্তির। তাই বলে পরিবারের সবথেকে বড় ছেলে কিংবা পাজি মেয়েকে জোর করে ঘাড়ে ধরে মাদ্রাসায় কিংবা চিল্লায় পাঠানো বন্ধ করেন। সত্যিই এটা দেখতে খুব কষ্ট হয় যখন দেখি একজন মাদ্রাসা ফেরত ছেলে বিড়ি ফুঁকছে- মদ গিলছে। কিংবা মাদ্রাসা থেকে পড়া কোনো মেয়ে শরীয়ত তো বটেই লাজলজ্জার মাথা খেয়ে পরকীয়া করে বেড়াচ্ছে। কথায় কথায় ইহুদিদের গালি দেয়া আমি সমর্থন করি না। খ্রিস্টান, বৌদ্ধ কিংবা হিন্দুদের ব্যাপারে অনর্থক বাজে শব্দ ব্যবহার করা কোনো মুসলমানের কাজ নয়। একাইভাবে আলে সৌদের তেলের টাকার ভাগ পাওয়া যেসব দালাল ইরানকে উঠতে বসতে গালি দেয় তাদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।