করোনা ছড়ানোর ব্রত নেয়া তাবলীগি ভাইয়েরা, একটা কথা মনে রাখবেন যাই হোক রাসূল সা. এর আদেশ অমান্য করে শহীদ হওয়ার কোনো পথ নাই। আপনি করোনায় মরেন কিংবা ইহুদি-নাসারাদের কোপেই মরেন, মরার আগে অবশ্যই ইসলামের বিধান মানাটা আপনার জন্য বাধ্যবাধকতা। অন্তত আব্দুর রহমান ইবন আউফ (রা.) এর মতো সাহাবী যেখানে বলছেন সেখানে তাঁর কথা অনাম্য করাটাও তো বেয়াদপি। আপনারা কেনো দলে দলে পাড়া মহল্লায় টহল দিচ্ছেন, নিজে মরছেন এবং অবশ্যই অন্যকে খুন করার গুরু দায়িত্বও নিজ কাঁধে তুলে নিচ্ছেন কেনো? সবাই কথা শুনলেও আপনারা কোন অদৃশ্য শক্তির অশুভ ইশারায় এই অন্যায় করে যাচ্ছেন সেটা বলবেন কি ?
করোনায় আর কত মানুষ মারা গেলে তবে তবলীগ জামাতের একরোখা গোঁয়ার সদস্যদের শিক্ষা হবে কবে? মানবজাতির কথা বাদ দেয়া হোক খোদ ইসলামের কত বড় ক্ষতি উনারা করছেন তার কি হিসেবে আছে? উনারা ইতিহাস যদি পড়তেন যাই হোক এমন গোয়ার্তুমি করতেন না। প্লেগের সময় চার্চের গোয়ার্তুমিতে অনেক মানুষ মারা যায় যাতে করে তাদের পরিবারের বিরক্ত মানুষজন হয়ে ওঠে অবিশ্বাসী। বলতে গেলে ইউরোপে ক্যাথলিকবাদ দুর্বল হয়ে ওঠার পেছনে প্লেগের এই ভূমিকা অস্বীকারের সুযোগ নেই।
ধরা যাক করোনায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়ে গেল তাবলীগের গোয়ার্তুমির কারণে! তারপর এদের পরিবারের লোকজন যখন প্রশ্ন তুলবে ইসলাম এবং মহান স্রষ্টা আল্লাহ নিয়ে তখন জবাব দেয়ার জন্য উনারা কি জীবিত থাকবেন? শহীদ হওয়া এতো সস্তা হলে সবাই হয়ে যেত, এর জন্য অত কষ্ট, অমন কাঠখড় পোড়ানোর প্রয়োজন ছিল না। এক্ষেত্রে উনারা যা করছেন সেখানে কোনো বাহাদুরি নাই। বরঞ্চ উনারা পুরোপুরি ইসলাম এবং নিজেদের ধারণাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন। বলতে গেলে উনাদের ব্যর্থতায় প্রশ্নের মুখে পড়ছে ইসলামের ধর্মাচার।
আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এ ব্যাপারে যেখানে স্পষ্ট নির্দেশনো দিয়ে গেছেন উনারা কেনো নিজেদের মতো করে মানব সভ্যতার সর্বনাশ ডেকে আনছে। মানব সভ্যতা বনাম করোনার লড়াইতে কে তাদের বলেছে করোনার পক্ষ নিয়ে মাঠে নেমে লড়াই করতে? এদের ভাবখানা এমন যে করোনা ভাইরাস উনাদের পরমাত্মীয়ের পুত্র। তাই মাঠে নেমে যত্তখুশি কোপাকুপি-দাপাদাপি করে বেড়ালেও উনাদের কিচ্ছু হবে না। মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ভারত থেকে শুরু করে বিশ্বের নানা দেশের সর্বনাশ করার পরেও আপনারা কেনো শান্ত হচ্ছেন না কে জানে?
শুধুমাত্র তাবলীগ জামায়াতের সম্মানিত সদস্যদের উদ্দেশ্যে লিখছি,———— প্লেগ, বসন্ত প্রভৃতি মহামারী আক্রান্ত অঞ্চলে গমন করা পুরোপুরি ইসলামী শরীয়াতে নিষেধ। পাশাপাশি দুর্গত এলাকায় অবস্থান করলে সেখান থেকে বের হয়ে আসার ব্যাপারেও রয়েছে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা। নিচের স্পষ্ট দলিলটি লক্ষ করুন—- আব্দুর রহমান ইবন আউফ (রা.) থেকে বর্ণিত———‘এ ব্যাপারে আমার নিকট একটি তথ্য আছে, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘তোমরা যখন কোন এলাকায় (প্লেগের) প্রাদুর্ভাবের কথা শুনবে, তখন সেখানে যেয়ো না। আর যদি কোন এলাকায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব নেমে আসে এবং তোমরা সেখানেই অবস্থান করো, পলায়ন করে ঐ স্থান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না’।
সিরিয়া যাত্রাকালে সেখানে প্লেগের প্রাদুর্ভাবের কথা শুনেছিলেন হযরত ওমর (রা.)। দীর্ঘভ্রমণে বেশ কয়েকবার সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েন তিনি। এই ভ্রমণ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও একেবারে সিরিয়ার উপকণ্ঠে গিয়ে তিনি আব্দুর রহমান ইবন আউফ (রা.) হাদিসের বাণী শোনামাত্র সেখানকার ভ্রমণ বাতিল করে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই সম্পর্কিত ঘটনার বর্ণনা আপনারা জানতে সহীহ বুখারির হাদিস ৫৭২৯-৩০; এবং সহীহ মুসলিম শরীফের হাদিস ২২১৯ থেকে। একজন মুসলিম হিসেবে আমার-আপনার সবার দায়িত্ব আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেখানো পথে চলা। সেখানে অনর্থক শহীদ হওয়ার গান কেনো উঠানো হচ্ছে। কি কারণে মানুষকে বিভ্রান্ত করে অনর্থক মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
সব থেকে বড় কথা এখনকার তাবলীগের যেকোনো সম্মানিত সদস্যের চাইতে হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) এর শহীদ হওয়ার আকাঙ্খা বেশি ছিল। কিন্তু তিনি যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করে বীরের মতো শহীদ হতে চেয়েছেন। তিনি বোকার মতো প্লেগে মরে শহীদ হওয়ার ধান্দা করেন নাই। তাই আপনি যদি প্রকৃত মুমিন ব্যক্তি হন সোজাসাপ্টা কথা হচ্ছে ‘আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে মহামারী দুর্গত এলাকা থেকে পালিয়ে যাবেন না। অন্যদিকে রাসূল (সা.) এর নির্দেশ মানলে আক্রান্ত এলাকায় জেনে-শুনে গমন করাও আপনার জন্য নিষেধ।’ সহজ বাংলায় বললে এর অন্যথা যে করবে সে প্রকৃত মুসলমানই নয়। বড় কথা হচ্ছে— রাসূল (সা.) এর নির্দেশ না মানলে একজন মুসলিম হিসেবে যে ভিত্তিহীন হয়ে পড়বে, তখন তার শহীদ হওয়ার সুযোগই থাকছে না।
আল্লাহ বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে এই ভয়াবহ ব্যাধি থেকে মুক্তি দিন। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, পারসিক কিংবা অবিশ্বাসী সে যেই হোক এই মহামারীর অপঘাতে কারও যেন আর মৃত্যু না হয়। আসুন আমরা যারা বিশ্বাসী, পড়ার চেষ্টা করি—- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’য়ফু আন্নি’। এর অর্থ— ‘‘হে আল্লাহ! তুমি তো ক্ষমার আধার, আর ক্ষমা করাকে তুমি ভালবাস। কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তিরমিযী : ৩৫১৩)। আমীন। আল্লাহ হুম্মা আমীন।