পাকশী পেপার মিলস, আলহাজ কটন মিল আর বিখ্যাত হার্ডিঞ্জ সেতুর পাশাপাশি দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে জংশন ঈশ্বরদীতে। তবে এখন ঈশ্বরদীকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় হয়েছে। এসেছে মধুমাস। এ মাসের রক্তিম রসালো ফল লিচু পাকতে শুরু করায় নতুন করে সেজেছে পুরো উপজেলা। কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি আর প্রকৃতিতে যেন সৌন্দর্যের আগুন। কিছুদিন আগে কৃষ্ণচূড়ায় যেমন পুরো বাংলাদেশ লাল হয়েছিল, এখন পাবনা জেলার ঈশ্বরদী লিচুর রক্তিম আভায় রঙিন। রাত জেগে বাদুড় চামচিকার সঙ্গে লড়াই, আর দিনের বেলায় লিচু চোর সামলাতেই ব্যস্ত দিন কাটছে এখন এলাকাবাসীর।
ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে বাসের জানালা দিয়ে তাকালে রাস্তার দুই পাশে চোখে পড়বে মাইলের পর মাইল লিচু বাগান। দূর থেকে দেখতে যেমন সুন্দর; স্বাদে, গন্ধে ও আকৃতিতেও এখানকার লিচু বাংলাদেশসেরা। তাই সময়ে কুলোলে এখনই ঘুরে আসতে পারেন ঈশ্বরদীর লিচু বাগান। পতিত জমি থেকে শুরু করে রেললাইনের ঢাল, ফসলি জমি থেকে সড়কের পাড় ঈশ্বরদীর সবখানে এখন লিচু চাষ হয়। এর পরও এখানকার কিছু এলাকা লিচু চাষের জন্য বিখ্যাত। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জয়নগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, মানিকনগর, ছলিমপুর, সাহাপুর, ভাড়ইমারী, জগন্নাথপুর, বক্তারপুর, বড়ইচড়া, শিমুলচড়া, দিয়াড় বাঘইল ও রূপপুর এলাকা। লিচুর কলম উৎপাদন থেকে শুরু করে মৌসুমে লিচু চাষই এ এলাকার অনেকের প্রধান পেশা। তারপর লিচুতে একটু রঙ ধরলে রাত জেগে তার রক্ষণাবেক্ষণের চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। তবুও লিচুর ফলন ভালো হলে এলাকাবাসীর মনে আসে স্বস্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈশ্বরদীর প্রায় তিন হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ হয়। বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় উদ্ভাবিত বিভিন্ন উন্নত জাতের লিচুর স্বর্গভূমি বলা যেতে পারে ঈশ্বরদীকে। এখানে বিভিন্ন জাতের লিচুর মধ্যে বেদানা, বোম্বাই, চায়না-১, মোজাফফরপুরী, বারি-১সহ বিভিন্ন জাতের লিচু চাষ হয়। তবে স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় বোম্বাই জাতের লিচুই চাষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়ে থাকে। এ লিচুর বড় সুবিধা এতে পোকার আক্রমণ হয় কম। পাশাপাশি অনেক পরে পাকায় বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। অন্যদিকে এ লিচুর বিচি অনেক ছোট হওয়ায় ভেতরের কোষ থাকে বেশি। স্বাদের দিক থেকে বিচার করতে গেলেও অনেক মিষ্টি আর সুস্বাদু। ফলে ক্রেতাদের কাছেও যেমন এর চাহিদা রয়েছে, তেমনি চাষের ক্ষেত্রেও কৃষকরা একে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন বেশি।
লিচুতে হালকা রঙ ধরার পর থেকেই ঈশ্বরদীতে বাগানে বাগানে লিচু পাড়ার উত্সব শুরু হয়েছে। মিরকামারী, চরমিরকামারী, মানিকনগর, ছলিমপুর, সাহাপুর, ভাড়ইমারীর কোনো এলাকায় গেলেই দেখা মিলবে শত শত লিচু গাছ। গাছের ডালে ডালে সবে পাকতে শুরু করা থোকা থোকা লিচু। নিতান্ত বেরসিকের মন পর্যন্ত ভালো করে দেয়া এ লিচু বাগানের কোনো একটিতে ঢুকলেই চোখে পড়বে চাষীদের ব্যস্ততা। কেউ গাছ থেকে লিচু পেড়ে প্যাকিং করছেন। তাদের কেউ সেগুলো থেকে ভালো-খারাপ বাছাই করছেন। এভাবে অনেক কর্মব্যস্ত দিন যাচ্ছে তাদের। স্বাদে-গন্ধে-সৌন্দর্যে অতুলনীয় এ লিচুর বাগান শুধু ঈশ্বরদীর নয়, পুরো বাংলাদেশের এক ঐশ্বর্য। মন চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন এ অনন্য সুন্দর লিচু বাগান থেকে।
আমার ঈশ্বরদীর লিচু বাগানে
(Visited 121 times, 1 visits today)