লক ডাউনের সময় অভিভাবকদের উচিত ছিল সন্তানদের মধ্যে মানবিক গুণাবলী বিকাশের চেষ্টা করা। বিশেষত, লেখাপড়া প্রত্যেক পরিবারে কমবেশি সবাই করে, তাদের মধ্যে থেকে বিদ্যায়তনিক পাঠ শেষে চাকরিও পায় অনেকে। কিন্ত তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব থাকে কয় জনার। এগুলো কেউ আমলে নিচ্ছে না। উল্টো উচ্চাভিলাসী মা বাবা নিজের সন্তানের ভাল লাগার থেকে পাশের বাসার ভাবীর ঘেউ ঘেউ আমলে নিচ্ছে বেশি। ফলে সাধারণ শিক্ষকের ক্লাস যে বাচ্চা করতে চায় না তাকে জোর দিয়ে অনলাইন ক্লাস নামের ইনকুইজিশনের মুখোমুখি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সূত্র ধরে দূরশিক্ষণের ভালমন্দ কিছুটা হলেও বোঝার ক্ষমতা হয়েছে। সে হিসেবে এটুকু বলতে পারি, এই পদ্ধতি বাচ্চাদের জন্য কোনোভাবেই কার্যকর হতে পারে না। এতে করে ছুটির আমেজ নিয়ে বড়িতে থাকা বাচ্চাদের বিরক্ত করার পাশাপাশি তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নেহায়েত অত্যাচার করা হচ্ছে মাত্র। অন্যদিকে সমানের ভুলভাল পড়ালেখা শিশুদের উপকারের চেয়ে ক্ষতি হচ্ছে বেশি।
প্রায় প্রতিদিন ট্রলের ছবি স্ক্রিনশর্ট বের হচ্ছে। কোনো না কোনো শিক্ষক অঙ্ক করাতে গিয়ে ভূল করছেন টিভি স্ক্রিনে। এতে করে শিশুরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেই, পাশাপাশি শিক্ষকদের নিয়ে তাদের ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে। তারা একটা পর্যায়ে ভাবতে শুরু করবে তাদের শিক্ষকরা কিছু জানে না। সুতরাং লেখা পড়া করে কোনো লাভ নেই। এই ভুলভ্রান্তিগুলো অনেকটাই আসলে অপ্রস্তুত অবস্থায় অনলাইন ক্লাস শুরু করার ফল। কিন্তু আমরা এই ভুল কিছুতেই বুঝতে চাচ্ছি। গাধার মালিক যেমন পশূটার পিঠে বোঝা না থাকলে দুশ্চিন্তা করে, তেমনি মা-বাবারাও এখন হয়ে উঠেছেন ঐ রকম। তারা সন্তানকে ফ্রি ফ্রি ঘুরতে দেখলে একটু হাসিখুশি দেখলে সেটা মনে হয় সহ্র করতে পারছেন না।
সুলেখক মো. আব্দুল হামিদ ব্যঙ্গ করে লিখেছেন ‘প্রায় দুই মাস হলো তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া শিশুটার প্রাইভেট ও কোচিং দুটোই মিস হচ্ছে। তার বুঝি ‘আইনস্টাইন’ কিংবা নিদেনপক্ষে ‘বিদ্যাসাগর’ হওয়া এবার আটকেই গেল! গর্ভধারিণী মা হয়ে সেটা সহ্য করবেন কী করে? তাই তো অনেকেই তোড়জোড় করছেন বাউবির দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে হলেও প্রাইভেট টিউশনটা চালু রাখতে। নইলে অন্য শিশুরা এগিয়ে যাবে, আপনার সন্তানের কী হবে?
কিন্তু প্রাইভেট টিউটররা নাকি ইদানীং বড় কঞ্জুস হয়ে গেছেন। তাদের ওয়ান টু ওয়ান ট্রিটমেন্ট আর এমবি খরচ দিয়ে নাকি পোষাচ্ছে না! আর সেটা সম্ভব হবেই-বা কী করে? তারা তো ভেড়ার পালের মতো দলবদ্ধভাবে জ্ঞান বিতরণে অভ্যস্ত। অতি চালাক অভিভাবকরা নাকি সেটা ধরতে পেরে পুরো ব্যাচের পয়সা একাই খসাতে রাজি হচ্ছেন, সঙ্গে ইন্টারনেট খরচও…তবু করোনাকে বুঝিয়ে দেবেন—সন্তানকে বিদ্যাসাগর বানানোর মিশনে কোনো রকম ছাড় নয়!’
জনৈক রম্যলেখক মজা কিরে একটি সিলি গল্প লিখেছিলেন। তার ভাষ্যে ‘জনৈক পিচ্চি তার বাবাকে বলছে আব্বু আব্বু আমার স্যারের না ভিডিও বের বের হইছে।’ পিচ্চির কথা শেষ হওয়ার আগেই তার বাবা হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন মায়ের দিকে চেয়ে- ‘আমি আগেই বলেছিলাম এই সব বাজে পুলাপাইনের কাছে পড়তে দিবা না। এখন দেখো ভিডিও বের হইছে। আমি এসবের কিছু জানি না। ফাইজলামি করে নিজের সন্তানকে বাজে লোকের কাছে পড়তে দিছো। এখন ঠ্যালা সামলাও’। পিচ্চি অবাক হয়ে থেকে বাপকে বলে ‘আব্বু ক্লাস লেকচারের ভিডিও বের হওয়া কি খুব খারাপ নাকি তুমি অন্যকিছু ভাবছো’। হতভম্ব বাবা সন্তানকে বলে ‘না বাবু এমনিই, যাও ভিডিও দেখতে যাও’।
