
গুপ্তগোষ্ঠী সিরিজ এর দ্বিতীয় বই গুপ্তগোষ্ঠী ইলুমিনাতি লিখতে গিয়ে কন্সপিরেসি থিওরির অনেক বিষয় নিয়ে পড়তে হয়েছিল। তখন সরার আগে খেয়াল করি মিসরের সিরিয়াল কিলার আল তিরবিনি নামে পরিচিত স্ট্রিট গ্যাং লিডার রামাদান আবদের রহিম মনসুরের কথা। এই অমানুষ মাত্র সাত বছরের ব্যবধানে কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া, Qalyoubeya এবং Beni Suei এলাকায় প্রায় ৩২ টি শিশুকে ধর্ষণের হত্যা করে।

লজ্জার বিষয় এই বেজন্মাকে যখন পুলিশ গ্রেফতার করে তখনও মিসরের মানুষ এর নিকৃষ্ট অপরাধের থেকে অন্য বিষয় নিয়ে মেতে উঠেছিল। তাদের আলোচ্য বিষয়ে হিসেবে স্থান পায় আল তরবিনির সমকামিতা, যৌন জীবন এবং নারী সম্ভোগের নানা সক্ষমতা। তার নিজস্ব গ্যাঙেরই সদস্য ছিল ১২ বছরের বালক Ahmed Nagui। আল তরুবিনি যখন তাকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করে সে গিয়ে পুলিশে অভিযোগ করে।
পুলিশ তাকে সাময়িকভাবে গ্রেফতার করলেও সে ছাড়া পায়। পুলিশের হাত থেকে সে তখন বেঁচে গেলেও তার কাছে রক্ষা পায়নি Ahmed Nagui। সে ছাড়া পেয়ে প্রথম প্রতিশোধ হিসেবে কয়েকদিন আটকে রেখে উপর্যুপুরি ধর্ষণের পর নানা রকম যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করে Ahmed Nagui কে।
এরপর সে বিভিন্ন স্থানের মধ্যে মূলত কায়রো আর আলেকজান্দ্রিয়ায় ঘুরে ঘুরে অপরাধ অব্যহত রাখে। কায়রো থেকে আলেকজান্দ্রিয়া তার বেশি পছন্দ ছিল কারণ ওখানকার পুলিশ কম, এবং দুর্নীতিবাজ। তার অপরাধের মূল কেন্দ্র ছিল ট্রেন। সেখানে সে রাস্তা থেকে বাচ্চাদের ধরে নিয়ে ট্রেনের ছাদে তুলে নিতো। সেখানে তার চ্যালাদের সঙ্গে নিয়ে তাদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে হত্যার পর কিংবা আধামরা করে নগ্ন অবস্থায় চলন্ত ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলত। সে নিজের নামই বদলে রাখে আল তরবিনি অর্থাৎ এর অর্থ ছিল এক্সপ্রেস ট্রেন।
বেলা শেষে এই বেজন্মাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার অন্যায় কুকর্ম থেকে পত্রিকার পাতা খুলে তার জীবনের নানা ঘনটা সম্পর্কে মানুষ নানা আলোচনা সমালোচনা করতে থাকে। তখন ফেসবুক না থাকায় হয়তো ঘটনাগুলো সেভাবে সবার চোখে পড়েনি। কিন্ত কায়রোর বেশিরভাগ পর্যটন কেন্দ্র আর সরাইখানায় যে আলোচনা হয়েছে সেখানে আল তরবিনির অপরাধ থেকে অন্য বিষয় মানুষ আলোচনা করেছে বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাস টেড বান্ডি নামে পরিচিত Theodore Robert Bundy মূলত serial rapist এবং kidnapper হিসেবে অগণিত অপরাধ করে। ১৯৭০ সালের দিকে প্রায় ৩০ জন নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিল। তার গ্রেফতারের পরেও অনেকে অপরাধ থেকে বাহ্যিক সৌন্দর্য ও স্মার্টনেস নিয়ে আলোচনা করেছিল। লজ্জার বিষয় হলেও সত্য অনেক মার্কিন নারী সে যদি কোনো দিন মুক্তি পায় তার সঙ্গে রাত কাটাতে চায় মর্মে গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার পর্যন্ত দিয়েছিল।

আদালতের ভুল আর পুলিশের দুর্বলতা আল তিরবিনির মতো কুখ্যাত খুনীকে ছেড়ে দিয়েছিল। মিসরের এক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা প্রভাব খাটিয়ে তার ক্যাডার আল তরবিনিকে মুক্ত করে। ভয়াবহ ব্যাপার ছিল ঐ রাজনৈতিক নেতার শিশু সন্তানকেই ধর্ষণের পর হত্যা করে চলন্ত ট্রেন থেকে নদীতে ছুঁড়ে ফেলেছিল আল তরবিনি। আজ সাহেদ এবং সাবরিনা গ্রেফতার হয়েছে ভালই। কিন্ত কারও প্রভাবে তারা যদি শাস্তি থেকে মুক্তি পায় তবে ঐ রাজনৈতিক নেতার জন্য ভবিষ্যত হয়তো তাদের জন্যও অপেক্ষা করবে।
জনগণ তার হাজার বছরের অভ্যাসবশত স্লাট/মিলফ শেমিং কিংবা বডি শেমিং করতেই থাকবে। আর তাতে করে আদালত থেমে যাবে না। জনগণের মুখরোচক আলোচনা বাদ দিয়ে দৃষ্টি দিন আদালতে। পাশাপাশি দৃষ্টি দিন তাদের প্রতি যারা সাহেদ-সাবরিনার মতো সিরিয়াল কিলার (বাংলা ভার্সন) কে বাঁচাতে চায়। তাদের স্মরণ করিয়ে দিন মিসরের ঐ রাজনৈতিক নেতার কথা। যে নেতা আল তিরবিনির মতো সিলিয়াল কিলারকে পুলিশের হাত থেকে মুক্ত করেছিল। পরে প্রাণ আর সম্ভভ বিসর্জন দিয়ে তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে অবুঝ শিশু সন্তান।
আজ অর্থলোভ, রাজনৈতিক প্রতিপত্তি কিংবা সাময়িক ইন্দ্রিয়সুখের লোভে অনেকে পক্ষাবলম্বন করতে পারে সাহেদ অথবা সাবরিনার। কিন্ত মনে রাখবেন আপনি, আপনার মা-বাবা কিংবা সন্তানদের কেউই এসব মেডিকেল মাফিয়াদের থাবা থেকে নিরাপদ থাকবে না। এরা কর্মনিকৃষ্টতায় সিরিয়াল কিলারদের থেকে কোনো অংশে কম জঘন্য না। ফলে ফেসবুকের খয়রাতি নারীবাদী কিংবা সামান্য লাইকের লোভে যারা জোকারি করছেন তারাও কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক হোন।
(Visited 329 times, 1 visits today)
বিশ্লেষণটি ভালো লেগেছে । ধন্যবাদ ।