গ্রাম-বাংলার চিরচেনা প্রবাদ ‘লুঙ্গি খুলে মাথায় পাগড়ি বাঁধা’ যা সময় ও প্রজন্মের পরিক্রমায় বদলে গিয়ে কেউ কেউ বলে ‘পাজামার ফিতা খুলে মশারী টাঙ্গান ‘। আদতে শহুরে মধ্যবিত্তের যারা পাজামা পরেন তাদের জন্য ঐ মশারী টাঙ্গানো আর আমাদের মতো গেঁয়ো মানসিকতার লুঙ্গি পরা মানুষদের জন্য পাগড়ি বাঁধার কাজটা কাছাকাছি। সম্প্রতি এই আপাত অশ্লীল লাইনটি ফেসবুকে লিখেতে বাধ্য হয়েছিলাম। সাম্প্রতিক দুরাবস্থায় সত্যিই বিশ্রিরকম উপমার সংকটে ভুগছি। হয়তো সে কারণেই এমন শব্দচয়ন।
আসন্ন খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় আমাাদের এখনই ভাবতে হবে ভর্তুকি কিংবা প্রণোদনা যাই হোক তার থেকে একটা টাকও যদি পোশাক খাত তথা শিল্পখাতে যেখানেই হোক দেয়া হয় তা হবে নিছক অপচয়। কারণ পোশাক শ্রমিকদের বেতন ভাতা মেরে দেয়ার ঝুঁকি তো থাকছেই, পাশাপাশি উৎপাদিত পোশাকের ক্রেতা কারা হবে সেটাও বড় প্রশ্ন। ফেসবুকে একজন ডাক্তার মনের দু:খে লিখেছেন ‘সেই শুরু থেকে কান্নাকাটি করলেন যে আপনাদের অর্ডার ক্যান্সেল হয়ে যাচ্ছে… এখন কোন চাড্ডি বানানোর জন্য ২৬ তারিখ গার্মেন্টস খুলবেন আপনারা?’ এটা আসলে আমজনতারও প্রশ্ন যেখানে একের পর এক অর্ডার ক্যান্সেল হচ্ছে সেখানে কাদের স্বার্থে কি প্রয়োজনে এতোগুলা মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে গার্মেন্টসগুলো খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে?
আমেরিকা এখন মৃত্যুপুরী, ইউরোপ ধুঁকছে। যারা আমাদের বায়ার ছিলেন তারা এখন হাহাকার করছে খাবারের জন্য। সুতরাং পোশাক কিনে নষ্ট করার মতো অর্থকড়ি তাদের পকেটে নাই। এসময়ে শিল্পখাত নিয়ে চিন্তা করার অর্থ এদেশের মানুষকে সোজাপাপ্টা মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়া। একটা আবেদনপত্র ভাইরাল হতে দেখলাম যেখানে জনৈক পোশাক মালিকনেত্রী দাবি করেছেন গণপরিবহন ছাড় করার জন্য। তিনি পোশাক শ্রমিকদের কারখানায় ফেরাতে চান।আমার অনুরোধ থাকবে এই বাসগুলোকে ছাড় করা হোক তবে তা হোক শ্রমিকদের হাওড় অঞ্চলে ধান কাটার জন্য প্রেরণের উদ্দেশ্যে। অন্তত বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ী ঢল নামার আগেই যাতে ধানগুলো কেটে ঘরে তোলা সম্ভব হয়।
একজন কৃষি প্রকৌশলী অনেক আশা নিয়ে বলছিলেন ‘বাংলাদেশের মাটিতে সোনা ফলে। তার ওপরে যোগ হয়েছে সাম্প্রতিক ছাদ কৃষি। মেরুদণ্ডওয়ালা সৎ ও নির্ভিক কৃষিবিদদের কাজে লাগানো গেলে যাই হোক বাংলাদেশে খাদ্যের অভাব হবেনা। তবে বাছাই করা লোক চাই। তেলবাজ, দলবাজ দিয়ে চলবেনা। এক্ষেত্রে তাদের দেশের প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো সৎ সাহস, প্রয়োজন মতো দক্ষতা প্রদর্শন আর কৃষি উন্নয়নের আন্তরিকতা থাকাটাও জরুরি। একেবারে সম্ভাবনাহীন শিল্পখাত ছেড়ে আমাদের দেশ ও মানুষ বাঁচাতে হরে এখনই দৃষ্টি দেয়া জরুরি কৃষি খাতে। পাশাপাশি চিকিৎসাখাতের লভ্য সুবিধার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। জাতির দুর্দিনে জীবন বাজি রেখে লড়তে থাকা বীর ডাক্তারদের উপযুক্ত সম্মান দিতে হবে। মধ্যরাতের সিঁধেল চোরের মতো টিভিতে গিয়ে বসে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে উল্টোপাল্টা বকা বুদ্ধিজীবী নামধারী ডিগ্রিঅলা গর্দভগুলোকে এখনই থামাতে হবে। তাহলে করোনার বিপর্যয় এড়ানো কঠিন, তবে সংকট উত্তরণ অসম্ভব হবে না।