বিশ্বখ্যাত অর্থনীতি বিভাগগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যদি হয় সফলভাবে গবেষণাকাজ এগিয়ে নেয়া, তবে বেশির ভাগ গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম এখন ব্যর্থ, এমনটা বলা যেতেই পারে। সম্প্রতি ‘জার্নাল অব ইকোনমিক পার্সপেক্টিভস’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা নিবন্ধ থেকে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু গবেষকরা শেষ পর্যন্ত কীভাবে এমন হতাশাপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছেন? তারা সব মিলে প্রায় ১৪ হাজার ৩০০ মানুষের ওপর জরিপ চালিয়েছেন। এরা সবাই ১৫৪টির মতো আমেরিকান ও কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এর বাইরে তারা গত দুই দশকে প্রকাশিত অনেক একাডেমিক পেপার নিয়ে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। এর আলোকেই তারা বলতে পারছেন, গত কয়েক দশকে পিএইচডি গবেষণার নামে শিক্ষার্থীরা কী পরিমাণ গবেষণাপত্র জমা করেছেন। অন্তত তারা তাদের গ্র্যাজুয়েট স্কুল ছাড়ার পর যে ছয় বছর ধরে কাজ করেছেন, সেখানে কী রকম শ্রম দিতে হয়েছে কিংবা কী করতে হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দেদার। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, মার্কিন মুলুকে পিএইচডি করতে গিয়ে বেশির ভাগ মানুষের লেগে যায় ছয় বছরের মতো।
এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, একটা গুরুত্বপূর্ণ পেপার তিনটা খারাপ পেপার থেকে ভালো। এক্ষেত্রে লেখকদের দায়িত্ব হতে পারে তাদের প্রকাশিত নিবন্ধগুলোর জার্নাল ক্যাটাগরি অনুযায়ী একটা সিরিয়াল করে ফেলা। এক্ষেত্রে তারা ‘আমেরিকান ইকোনমিক রিভিউ’ বা সমপর্যায়ের জার্নাল থেকে শুরু করে একটা ধারাবাহিক পর্বে সাজাতে পারেন তাদের লেখাগুলো। এক্ষেত্রে আর কোন কোন জার্নালে তাদের লেখা ছাপা হয়েছে, সেটিও একই অনুক্রমে আসতে পারে। অন্যদিকে ধরা যাক একটি নিবন্ধের কথা, যেটা ছাপা হয়েছে জার্নাল অব পলিটিক্যাল ইকোনমিতে; সেটাকে এইআর জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধের মানে এগিয়ে রাখতেই হয়। একইভাবে ইকোনমিক থিওরি নিয়ে লেখা কোনো নিবন্ধ তার গুরুত্ব অনুযায়ী প্রকাশ হতে পারে।
তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটু অবাক হওয়ার ব্যাপার আছে। বিশেষ করে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা গবেষণার ক্ষেত্রে তেমন ছাড় দেয়ার মানসিকতা রাখেন না। হার্ভার্ড কিংবা এমআইটি থেকে পাস করা বেশির ভাগ গ্র্যাজুয়েট তথা প্রায় ৯৯ শতাংশ নিজ নিজ অবস্থান থেকে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তারা তাদের ছয় বছরের গবেষণাকালে কমপক্ষে চারটি এইআর সমমানের নিবন্ধ প্রকাশ করেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ওপরের সারির ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীরাও অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের গবেষণা প্রবন্ধ তৈরি করেছেন। এক্ষেত্রে ছয় বছরের শিক্ষাজীবনে বেশির ভাগ উচ্চতর শিক্ষার্থী যেসব নিবন্ধ লিখছেন, তার অবস্থান এক কথায় যাচ্ছেতাই। হার্ভার্ড, এমআইটি কিংবা শিকাগো যে যেখানেই হোক, ৫০ শতাংশ প্রকাশিত নিবন্ধের মান তেমন জুতসই হচ্ছে না।
তবে এভাবে গবেষণা চলতে থাকলে তার ভবিষ্যত্ কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দেদার। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে মানের গবেষণা হচ্ছে, তা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে বিশ্বসেরা গবেষকদের যেখান থেকে উঠে আসার কথা, সেখানেই গবেষণার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অন্তত নন-টপ ৩০ বিশ্ববিদ্যালয় যে মানের গবেষণা করছে, তার সঙ্গে সামনের সারির ১০টা বিশ্ববিদ্যালয়কে মেলানোর সুযোগ থাকছে না। আর কেউ কেউ বলছেন, সামনের সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণার তুলনায় টেক্সাস, অস্টিন কিংবা পেনসিলভানিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্ষেত্রে বেশ ভালোই করেছে বলা যায়।
অন্তত সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধ থেকে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে পিএইচডিগুলো শেষ হচ্ছে আর তার অর্জনটাই বা কী? আর সেটা যাচাইয়ের জন্য কিছু প্রয়োজন নেই, শুধু পাবলিকেশন রেকর্ড চেক করলেই হবে। শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এখন উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন তাদের বিদ্যায়তনিক চাকরির উন্নতির জন্য। সেখানে গবেষণার বিষয়টি তাদের কাছে মুখ্য হয়ে থাকছে না। ফলে শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, অন্য বিষয়ের মতো অর্থনীতির বেশির ভাগ পিএইচডি অর্জিত হওয়ার পর তার প্রডাক্টিভিটি নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। ২০০৫ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে এক যুক্তরাষ্ট্র থেকেই পিএইচডি অর্জন করেছেন এক লাখের মতো শিক্ষার্থী-গবেষক। কিন্তু ওই সময়টায় মাত্র ১৬ হাজারটি প্রফেসরের পদ সৃষ্টি কিংবা খালি হয়েছে। আর তাই নিজের ক্ষতি না করে টিকে থাকার কারণেই সবাই সুপারিশ করছেন একাডেমিক চাকরির চেয়ে প্রডাক্টিভ রিসার্চার হওয়ার জন্য।