অতি সম্প্রতি আমার প্রিয় লেখক Mohiuddin Mohammad ডাক্তার রাগিব সারজানির মুসলিমজাতি বিশ্বকে কী দিয়েছে (১-৪ খণ্ড) গ্রন্থটির কঠোর সমালোচনা করেছেন । এমনকি এই বইটিকে তিনি সরাসরি প্রোপাগান্ডামূলকও বলেছেন। অন্য কেউ এইরকম একটা স্ট্যাটাস দিলে আমি ফিরে তাকিয়ে আমার সময় নষ্ট করতাম না। কিন্ত স্ট্যাটাস দাতার সম্মানে বাধ্য হয়ে কিছু লেখার প্রয়োজন বোধ করছি। মজার ব্যাপার অনেক অর্বাচীন উনার প্রসঙ্গে যে কথা বলে বেড়ায় আজ ঠিক সেই কাজটা তাঁর মতো বিজ্ঞ একজন লেখকও করে বসলেন।
বাঙালি যেভাবে বলে উনি বিজ্ঞানের ছাত্র ও গবেষক হয়ে কিভাবে মানবিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করেন? তেমনি উনিও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন রাগিব সারজানিকে।তবে একটু পর ফিরে এসে বলেছেন যেহেতু রাগিব ধর্মপ্রচারক তাই তিনি পরিত্যাজ্য এবং এই বই প্রপাগাণ্ডা।অবশ্য এটা নতুন কিছু না। একই বদনাম দীর্ঘসময় ধরে বাঙ্গাল করেছে রসায়নের শিক্ষক হুমায়ূন আহমেদের ক্ষেত্রেও।
জনাব মহিউদ্দিনের দীর্ঘ লেখাটা পড়ে আমি বুঝতে পারলাম তিনি অন্য যে বইই পড়েন রাগিব সারজানির মুসলিমজাতি বিশ্বকে কী দিয়েছের (১-৪ খণ্ড) একটি বইও পড়েননি। এমনকি পড়ে থাকলে কোনো বই পুরোপুরি পড়েননি। কারণ উনার মতো বিজ্ঞজন এই সহজ-সরল বইটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করলেও আলোচনাটা উনার অন্যসব লেখার মতো তথ্যবহুল না হয়ে বিষেদগারে পরিণত হতো না।
ইতিহাস- প্রত্নতত্ত্ব পড়া এবং পড়ানো মানুষ হিসেবে রাগিব সারজানির ইতিহাসচর্চার অনেক সমালোচনা আমারও আছে। তবে খেয়াল রাখার প্রয়োজন করি আমার সে সমালোচনা যেন বিষেদগারে রূপ না নেয়। আমি অবাক হলাম এই বইয়ের সমালোচনা শুরু হয়েছে এমন একটা বাক্য দিয়ে যেখানে জনাব মহিউদ্দিন বলেছেন “মুসলিমজাতি বিশ্বকে কী দিয়েছে” এরকম একটি বই বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় হয়েছে। বইটি ইতিহাস বিষয়ক। ইতিহাস খুব সাবধানে পরিবেশন করতে হয়। কারণ ইতিহাস হলো ফ্যাক্ট, কোনো মিথ নয়। লেখকের ক্রেডিবিলিটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
চমকে গিয়ে খেয়াল করলাম এটা খুশি কবীর টাইপের অনেকের নারীবাদ বিশ্লেষণ কিংবা মিস্টার বিনের পেইন্টিং বিশ্লেষণের সঙ্গে তুলনীয়। মহিউদ্দিন আরও লিখেছেন ‘ইতিহাস বিষয়ক বইপত্রের ক্ষেত্রে, ধর্মীয় ও রাজনীতিক প্রচারকদের লেখা বইকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয় না। কারণ এ ঘরানার লেখকেরা মূলত ইতিহাসের নাম করে প্রোপাগান্ডা রচনা করেন। কোনো বিষয়ে আনবায়াসড ওপিনিয়োন তারা দিতে পারেন না। নির্মোহভাবে কোনো ঘটনাকে বিশ্লেষণও করতে পারেন না।’
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে যদি আমরা বই না পড়ার আগেই ধরে নেই তারা মতামত দিতে পারেন না, বিশ্লেষণ করতে পারেন না তাহলে তো বিপদ। এখন অনেকে সম্প্রতি সমালোচনা করছেন ডা. Rafan Ahmed এর। তিনি তার ইউভাল হারারি পাঠ ও মূল্যায়ন (পশ্চিমা অ্যাকাডেমিকদের চোখে) শীর্ষক বইতে যাই করেন হারারিকে কিন্ত উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেননি। কিন্ত মহিউদ্দিন ভাইয়ের তথ্য মেনে নিলে এটাও প্রপাগাণ্ডামূলক হওয়ার কথা। এবং অবশ্যই তার সমালোচনাকে উড়িয়ে দেওয়াই উচিত।
মহিউদ্দিন ভাইয়ের এই প্যারাগ্রাফটা হয়ে গেছে অনেকটাই শিশুতোষ ‘কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হিশেবেও তারা দুর্বল। লেনিন এবং ট্রটস্কি, রুশ বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। কিন্তু তারপরও এ দুজনের লেখা আমাকে খুব সাবধানে পড়তে হয়। পাতার পর পাতা অন্য লেখকদের সাথে ক্রস-চেক করতে হয়। এর কারণ, তাদের দুজনেরই নিজস্ব মতবাদ রয়েছে। ফলে তাদের পরিবেশিত ইতিহাস, আসলেই ইতিহাস না কি প্রোপাগান্ডা, এটি নিয়ে দোলাচলে থাকতে হয়।’
হ্যাঁ!!! মেনে নিলাম। তাহলে আপনি বলতে পারবেন ইতিহাসের স্বাক্ষী হিসেবে কারা হাল্কের মতো শক্তিশালী? তবে কি রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতো বর্ণনা হতে হবে!! কিংবা ইউভাল নোয়াহ হারারির মতো। যেখানে সবার পিণ্ডি চটকে বেলাশেষে ঘষেমেজে জুদাইজমের উপরে কিছু নাই চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে। তার থেকেও বড় কথা কে বায়াসড নয়।
বিপদজনক কথাগুলো মহিউদ্দিন লিখেছেন এই প্যারায়। তিনি বলেছেন ‘রাগিব সারজানি একজন চিকিৎসক। একজন চিকিৎসকের ইতিহাস লেখার অধিকার নেই, এ দাবি আমি করছি না। তিনি অবশ্যই যেকোনো বিষয় নিয়ে লেখার অধিকার রাখেন। কিন্তু তাঁর পরিবেশন করা ইতিহাসকে সত্য হিশেবে আমলে নিতে হলে, সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ তাঁর বড় পরিচয় তিনি একজন ধর্ম প্রচারক। ফলে প্রোপাগান্ডার বিষয়টি এখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসে। ’
উনার কথা শুনে এখানে মনে হয়েছে ধর্মপ্রচার এবং প্রোপাগাণ্ডা একইকাজ। তবে কি যারা ধর্মদ্রোহের নামে কুৎসা রটায়। ভিন্ন ধর্মের প্রচারক ও বিশ্বাসকে কটাক্ষ করে তাদেরটাই সর্বজনসিদ্ধ হিসেবে মেনে নিতে হবে? কারণ কথাটা তো তিনিই বলেছেন কোনো প্রোপাগান্ডিস্ট যখন ইতিহাস লিখতে বসেন, তখন তিনি কেবল নিজের সুবিধাজনক বইপত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন, যা সত্য পরিবেশনের পরিপন্থী।
ফাঁকা আওয়াজের ফাঁপা সমালোচনা আমিও খানিকটা করে নিলাম। কিন্ত বইটি থেকে কিছু কথা বলতে হয়। সহজভাবে বলতে গেলে এই বই কোনো একাডেমিক ঘরানার লোকজনের জন্য নয়। সাধারণ মানুষের জন্য মুখরোচক একটা বই যা পড়ে তারা নিজ ধর্মের সোনালী অতীত সম্পর্কে জানতে পারবে? সেখানে তর্ক বিতর্ক কিংবা বিশ্লেষণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাহারি তথ্যের সমাবেশ।
শুরুতে লেখক বইয়ের নাম দিয়েই নিয়েছেন মুসলিমজাতি বিশ্বকে কী দিয়েছে। ফলে এখানে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ইহুদিরা বিশ্বকে কি দিল সেটা লেখার প্রয়োজন নাই। আর এটা লেখা নাই বলে এটাকে প্রোপাগান্ডা বলা যায় না। এর থেকে যদি উনার রুহামাউ বাইনাহুম পড়ে কেউ এই কথা বলত সেটা মেনে নেওয়ার সুযোগ ছিল।
ইসলামী স্থাপত্য, ইসলামের বিচার ব্যবস্থা, ইসলামের মূল ভিত্তি, একত্ববাদ এগুলো নিযে কথা বলাটাকে আর যাই হোক প্রপাগান্ডা বলা যায় না। অন্তত আমরা ধরে ধরে পয়েন্ট বের করতে পারি। যেমন, ইবনে আল হাইথাম মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কার করেছেন, নিউটন সেখান থেকে চুরি করেছে।এইটা অদ্ভুত একটা কথা।যদিও এই আবু আলী হাসান ইবনে আল – হাইথামের মহাকর্ষ বিষয়ক অনুমান বেশ দুর্বল ছিলো বলে অনেক পদার্থবিজ্ঞানী গঠনমূলক সমালোচনাও করেছে।
রাগিব সারজনির সমস্যা এখানেই।তিনি তাঁর ‘মুসলিম জাতি বিশ্বকে কী দিয়েছে’ বইটির ২য় খণ্ডের পঞ্চম অনুচ্ছদে সুন্দরভাবে এই কথাটি এড়িয়ে গিয়েছেন।তিনি ইবনে আল হাইথামকে দিয়েছে শতভাগ কৃতিত্ব আর নিউটনকে অপাংক্তেয় করে ছেড়েছেন।কিন্ত অপটিক্সে আবু আলী হাসান ইবনে আল – হাইথামের যে কাজ তা তাঁকে অমর করে রাখার জন্য যথেষ্ঠ। অহেতুক তাকে আরও বড় করতে গিয়ে নিউটনের পুঙ্গি বাজানোর দরকার ছিল না।
রাগিব সারজানির এই বইটিতে প্রোপাগান্ডার সুযোগ কম। কারণ এখানে তিনি বিভিন্ন জ্ঞানের উদ্ভাবন, পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর বিশ্বাস, স্রষ্টা সম্পর্কিত ধারনার সংশোধন ইত্যাদিতে বেশি মন দিয়েছেন। পাশাপাশি ইসলামি দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞানের ভিত্তি নির্মাণ ও সমাজবিদ্যায় মুসলিমদের অবদান শুধু তথ্যমূলকভাবে তুলে ধরেছেন। এখানে তিনি যে তথ্য দিয়েছেন তা সহজেই অনলাইনে যাচাইযোগ্য। এমন আহামরি কিছু তিনি লিখেন নাই। কিংবা আর্জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার বিবিলালের মতো এমন কিছু তার বইতে নাই যার ভিত্তিতে মানুষ হারে রে রে করে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার মতো কেনো মন্দির,গির্জা, সিনাগগ কিংবা প্যাগোডা ভাঙ্গতে চলে যায়।
ইসলামি সভ্যতায় মানবাধিকার, চিন্তা ও ধর্মের স্বাধীনতা, মুসলিম পরিবার, সমাজের কাঠামো, বিচারবিভাগ, প্রশাসন, স্বাস্থ্যবিভাগ, পান্থনিবাস, মুসাফিরখানা, ইসলামি শিল্পকলা, স্থাপত্যকলা, অলংকরণশিল্প, আরবি লিপিকলা নিয়ে তিনি লিখেছেন বিশদভাবে।মুসলিম যুগে তৈজসপত্রের নান্দনিকতা, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোর সৌন্দর্য, পরিবেশের সৌন্দর্য, বাগানচর্চা, চারিত্রিক সৌন্দর্য, সূক্ষ রুচিবোধ নিয়ে আলোচনা করেছেন। চিন্তা-ভাবনা, জ্ঞানবিজ্ঞান, ভাষা-সাহিত্য ও শিল্প-সবক্ষেত্রেই ইউরোপীয়দের যে একাধিত্য তার মূলে আঘাত করেছেন রাগিব সারজানি। আর ডিকলোনাইজেশনের উপযুক্ত মাধ্যম হওয়ার সুযোগ করে নিয়েছে বইটি। তাই একে প্রোপাগান্ডা না বলে পাঠ করা উচিত, সেই সঙ্গে গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা যায়।
ইসলামী সভ্যতায় রাসুল সা. ঘোষণা করেছেন, জ্ঞান অন্বেষণ প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ। জ্ঞান অর্জন ধর্মীয় অবশ্য কর্তব্যে পরিণত হওয়ার পর কিভাবে জ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটেছে সেগুলোর তথ্য দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে বায়তুল হিকমার মতো গ্রন্থাগার কিংবা খলিফা মামুনের সময় অনুদিত বইয়ের সমপরিমান স্বর্ণ দিয়ে অনুবাদকদের উদ্ধুদ্ধ করার গল্পও তিনি লিখেছেন। তার থেকেও বড় কথা জ্ঞানের জন্য ওয়াকফ সম্পত্তি দেওয়ার বর্ণনাও রাগিব এই বইতে লিখেছেন।
আমি আগেই বলেছি তিনি শুরুতে বইয়ের নামেই সতর্ক করেছেন। যেহেতু মুসলিম জাতি কি দিয়েছে এমন বর্ণনা নিয়ে বইটি রচিত তাই ইতিহাসের দলিল দস্তাবেজ থেকে এসব তথ্যই সংগ্রহ করা হবে যা মুসলিম জাতির সঙ্গে সম্পর্কিত। তার বাইরেও তিনি কমবেশি সবার গল্প এখানে এনেছেন। যা অনলাইনের এই যুগে সহজ যাচাইযোগ্য।
এরিস্টেটল, প্লেটো, সক্রেটিস, কোপার্নিকাস, জিয়োর্দানো ব্রুনো, গ্যালিলিও, নিউটন, জাবির ইবনে হাইয়ান, আল-খাওয়ারিজমি, আল-রাযি, আল-হাসান ইবনুল হাইসাম, ইবনে নাফিস, ফ্রান্সিস বেকন, মুস্তাফা নাজিফ, কার্ল পিয়ারসন, জলদাকি, তুগরায়ি, মুসা ইবনে শাকির, আয-যাহরাবি, ইবনুল বাইতার, উইলিয়াম হার্ভে, মহিউদ্দিন আত-তাতাবি, ম্যাক্স মেয়েরহোফ কিংবা জর্জ সার্টনসহ আরও অনেকেই আছেন।
তেমনি এমিল ডুর্খেইম, হিবাতুল্লাহ ইবনে মালকা, হিপোক্রেটিস, গ্যালেন, আর্কিমিডিস, হুনাইন ইবনে ইসহাক, ইয়াহইয়া ইবনে মাসাওয়াইহ, ইবনে সিনা, আলি ইবনে ঈসা আল- কাহহাল, তিসিবিওস, হেরন অফ আলেকজান্দ্রিয়া, ব্রেইজ প্যাসকেল, আলহামদানি, আবু ইউসুফ আল-কিন্দি, নাসির উদ্দিন তুসি, ইবনে হাযম আল-আন্দালুসি, আল ইদরিসি, আবু উবাইদুল্লাহ আল-আন্দালুসি, আল বাত্তানি কিংবা আবদুর রহমান আস সুফিও বাদ যাননি এখানকার বর্ণনা থেকে।
আমরা দেখতে পাই, আবুল ওয়াফা আল-বুযজানি, আবু ইসহাক আন-নাক্কাশ আয-যারকালি, আবুল ইয়ুসর বাহাউদ্দিন আল-খারাকি আল-বাদি আল-আস্তুরলাবি, ইবনে শাতির, উলুগ বেগ, আর-রুদানি শামসুদ্দিন আল-ফাসি, মারয়াম আল আস্তুরাবি, বদিউযযামান আল-জাযারি, তাকিউদ্দিন আদদিমাশকি, আল-ফারাবি, ইবনে রুশদ এবং ইবনে খালদুনসহ অনেক মনীষি ও তাদের রেখে যাওয়া অবদান সম্পর্কে রাগিব লিখেছেন বেশ। ফলে যাই হোক এই বইটিকে প্রোপাগাণ্ডা বলার সুযোগ নাই।
ব্যক্তিগত বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসের জের থেকে ধর্মপ্রচার এবং প্রোগাগাণ্ডাকে গুলিয়ে ফেলাটা সেই মধ্যযুগের ইউরাপ থেকে সংক্রমিত দুরারোগ্য মহামারী। ঠিক একইভাবে বিজ্ঞানচর্চা আর নাস্তিকতাকে গুলিয়ে ফেলাটাও একটা বুদ্ধিবৃত্তিক সংক্রামক রোগ। এই ভয়াবহ দুটি রোগ থেকে মুক্ত থেকে আমরা কোনো বই পড়ার পর সেটাকে নির্মোহ বিশ্লেষণের চেষ্টা করি। কিন্ত বই না পড়ে লেখকের নাম, তার অভিজ্ঞতা আর নিজের চিন্তাভাবনা থেকে কয়েক চিমটি যুক্ত করে কিছু লিখতে গেলে সেটাই বরং প্রোপাগান্ডা।
ইতিহাস পড়তে গেলে আমাদের মনে রাখা উচিত সবাই তপন রায়চৌধুরী হয় না। ইতিহাসের সব বই বাঙালনামা হবে না। এখানে সব রকম বই থাকবে। তার মধ্যে থেকে সূত্র নিতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে তথ্যসূত্রের মারপ্যাঁচ। তারপর একের পর এক বই পড়তে থাকলে আমাদের ক্রমবর্ধমান অভিজ্ঞতাই পথ করে দেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের। অন্তত বই না পড়ে বইয়ের মলাট, রং এবং লেখকের সম্পর্কে শ্রবণানুমানে লব্ধ জ্ঞানের আলোকে কিছু বললে সেটা নিঃসন্দেহে ভ্রমাত্মক, প্রপাগাণ্ডামূলক এবং দুরভিসন্ধির অনুঘটক। এতে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্তি ঘটবে না। বরঞ্চ একচোখা তর্ক আর প্রতিদ্বন্দ্বীতার নামে বিদ্বেষ ছড়ানোর ফলে ঘোলাটে-ধোঁয়াটে পরিবেশ থেকে জন্ম নেবে বয়াবহ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধকতা।