প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকদের নিরলস শ্রমে হরপ্পা সভ্যতার অনেক বিস্মৃত অধ্যায় ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে। মহেঞ্জোদারো থেকে পাওয়া সেই বিখ্যাত ’ডান্সিং গার্ল’ শেষ পর্যন্ত চিহ্নিত হয়েছে দেবী পার্বতী হিসেবে। এর থেকে প্রমাণিত হয়, হরপ্পার অনেকে শৈব মতাদর্শিক ছিলেন। সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব হিস্ট্রিকাল রিসার্চের’ উদ্যোগে ‘ইতিহাস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এটা জানা গেছে। এটা নিয়ে একটা পরিচিতিমূলক লেখা লিখলাম Daily Bonik Barta ( বণিক বার্তা ) পত্রিকার জন্য। মূলত আগে আবিষ্কৃত একটি মূর্তির ভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে এখানে। এর মাধ্যমে প্রচলিত ইতিহাসে নতুন একটি বিষয় যুক্ত হচ্ছে যাচ্ছে বলে গবেষকদের অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক ঠাকুর প্রসাদ ভার্মার ‘বাইদইক সাভইয়াতা কি পুরাতাত্ত্বা’ তথা বৈদিক সভ্যতার প্রত্নতত্ত্ব শিরোনামে প্রকাশিত একটি হিন্দি নিবন্ধে সিন্ধু তথা হরপ্পা সভ্যতার একটি বৈদিক পরিচয় ফুটে উঠেছে। তার বিশ্লেষণে এটা এখন স্পষ্ট যে সেই ২৫০০ বছর আগেও মানুষ শিবের আরাধনা করত। প্রায় ২৫০০ বছর আগের নৃত্যরত নারী মূর্তিটির গাঠনিক নানা আঙ্গিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রফেসর ভার্মা দাবি করেছেন এটা হিন্দু দেবী মূর্তি। বিভিন্ন যুক্তিতর্কের মাধ্যমে এটাই প্রথম দাবি।
তিনি উক্ত গবেষণা নিবন্ধে আরও অনেকগুলো প্রমাণ হাজির করতে চেয়েছেন যার মাধ্যমে ঐ সময়কালের শিব আরাধনার কথা স্পষ্ট হয়। প্রত্নসূত্র হিসেবে দেখা যায় বিখ্যাত ‘সিল ৪২০’ এ উৎকীর্ণ মোটিফ তথা শিং ওয়ালা যোগীমূর্তিটি অনেক পশুতে ঘিরে আছে। তিনি দাবি করেছেন এটা শৈব আরাধনার উপযুক্ত প্রমাণ। তবে এই সিলের ব্যাখ্যাটি এখনও বিতর্কের অধীন। প্রত্নতাত্ত্বিক জন মার্শাল অবিশ্যি এমনি একটি শিবের আদিরূপ শনাক্ত করেছিলেন সেই ১৯৩১ সালের দিকে। পরে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকরা তাঁর সঙ্গে একমত হতে পারেন নি। কেউ কেউ সেই শিবপ্রতিকৃতিকে উল্টো নারী বলে দাবি করেছেন।
মহেঞ্জোদারোর আরেকটি প্রতিকৃতিতে ত্রিফল প্যাটার্ন শনাক্ত করে সেটাকে বেশ জোর দিচ্ছেন প্রফেসর ভার্মা। তিনি দাবি করেছেন এর থেকে যে সাধু রাজার কথা বলা হচ্ছে সেটা একজন হিন্দু দেবতার প্রতিকৃতি। তিনি ঐ ত্রিফলকে শৈব আরাধনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিল্বপত্র বলে দাবি করেছেন। ‘যেখানে শিব সেখানেই শক্তি’ এই নীতির উপর ভিত্তি করেই প্রফেসর ভার্মা দাবি করেছেন ঐ নৃত্যরত নারী প্রতিকৃতি পার্বতীর মূর্তি হবে। এর আগে হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো থেকে শিব কিংবা পার্বতী মূর্তি প্রাপ্তির দাবি কেউ করেনি। এক্ষেত্রে প্রফেসর ভার্মা যে মূর্তিটিকে পার্বতীর মূর্তি বলে দাবি করেছেন সেটা নতুন কোনো আবিস্কারও নয়। বরং চিরচেনা নৃত্যরত নারীর তামার মূর্তিটি তার গবেষণার মাধ্যমে নতুন ব্যাখ্যার পেয়েছে এটুকু বলা যায়।
ইতিহাসের নতুন গবেষণা পত্রটি প্রকাশ হয়েছে এই মাসে। স্বল্প হিন্দিজ্ঞানে সেটা থেকে কয়েকটা নিবন্ধ পড়ার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি হঠাৎ দেখলাম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য হিন্দু কিংবা এমনি কয়েকটি দৈনিকও এই নিবন্ধ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। তবে ব্যাখ্যা আমলে নিলে এটা হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো সভ্যতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণা হবে নিঃসন্দেহে।