কারও জন্য অপ্রাপ্তিও অনেক আনন্দ, গৌরব আর সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচার কারণ হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে অনেকের চূড়ান্ত প্রাপ্তিও নিতান্ত অপমানের কারণ। এই ধরা যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ব্যাচের সেরা, যোগ্য,দক্ষ এবং বিষয়ের প্রতি সবচেয়ে আন্তরিক ছাত্রছাত্রীর কথা। তাদের স্বাধীনচেতা মনোভাব, আত্মসম্মানবোধ কিংবা অসন্তোষ প্রকাশের দূরন্ত সাহসের কোনোটাই তাদের অযোগ্য কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে কম যোগ্য এবং অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতাবান শিক্ষকদের পছন্দ হয়না। ফলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা নানা দিক থেকে নিগ্রহ আর বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। অন্যদিকে আরেকটা যাপিত জীবনের শুরু হয় সেখানে যেখানে সম্মান হারিয়ে গিয়ে ঘৃণা আর ভয় অবশিষ্ট থাকে। একটা সময় ভয় সরে গেলে পড়ে থাকে শুধু সুতীব্র ঘৃণা।
বিশেষত, শিক্ষক নামধারী ঐসব অপদার্থ বিশ্ববিদ্যালয় চাকুরেদের নষ্ট কারিকুরি কিংবা এক্সাম ইঞ্জিনিয়ারিং এর মারপ্যাঁচে সে ব্যাচের প্রথম হতে পারেনি। কিংবা ধরা যাক দুর্ঘটনাবশত সে প্রথম হয়ে গেল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় শিক্ষক নিয়োগের বৈতরণী পার হয়ে যাওয়া তারপক্ষে আর সম্ভব হয় না। কিন্তু অদ্ভত বিষয় হলেও সত্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে যার সঙ্গে যতবড় অবিচার এবং অন্যায় হয়েছে সে অন্য কোথাও গিয়ে তার চেয়ে ঢের বেশি প্রতিষ্ঠিত, যোগ্যতার মানদণ্ডে প্রমাণিত এবং সম্মানিত হয়েছে। পক্ষান্তরে পা-চাটা স্বভাবের অনেকে নিজ বিভাগের ঝাড়ুদার হওয়ার যোগ্য না হলেও শেষ পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করে বসে।
দেশ, জাতি ও প্রজন্মের দুর্ভাগ্য হলে এসব মানুষ একটা সময় নিজেদের কাছে ছোট হয়ে যায়। এরা যখন গভীর রাতে ঘুমানোর আগে বিদ্যুৎ বাতিটা নিভিয়ে দেয়। ঘোর অন্ধকারে তার থেকেও কৃষ্ণকায় স্বীয় মূর্তি দেখে অনেকটা ভয়ে আঁৎকে ওঠে। নিজের অন্যায় অর্জনের কদর্য রূপটা এদের কাছে পরিষ্কার। তাই পরদিন সকালে প্রতিষ্ঠানে পা রেখে এরা হিংস্র হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের উপর। এদের ভাবখানা এমন তুই আমাকে সম্মান কেনো দিবি না? এমন ঘটনা অতীতে বহু ঘটে গেছে, এখন ঘটছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। তবে তাই বলে সময় থেমে থাকলেও প্রতিশোধ নেয় নির্মমভাবে। যারা কর্তাব্যক্তি হিসেবে রয়েছেন তাদের সবার হয়তো সেকেন্ড হোম নাই। তাই এখন একটু হলেও ভাবা প্রয়োজন।
অনুপম রায় ন্যাকামি করে কোনো এক গানে বলেছিলেন যেটা ছিল না,ছিল না সেটা না পাওয়ায় থাক সব পেলে নষ্ট জীবন। বাংলাদেশে হচ্ছে উল্টোটা যাদের জীবন নষ্ট, যারা ভ্রষ্ট যারা মনমানসিকতার দিক থেকে ইতর এবং নীচ তারাই সব পেয়ে যাচ্ছে। এদের সবপ্রাপ্তি রুখে দেয়ার চেষ্টা যারা করছে তারাই এখানে লজ্জিত, নিন্দিত ঘৃণিত ধিকৃত। তবে ভয়ানক কথা হলেও সত্য একটা বনে বাঘ-সিংহের বিপরীতে শুয়োর, শেয়াল ও হায়েনা অনেক বেশি থাকে। পছন্দটা আপনার করে নেয়া উচিত, বাঘ-সিংহের মত বাঁচবেন নাকি শুয়োর, শেয়াল কিংবা হায়েনার মতো উচ্ছিষ্টভোগী হয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন?